• রোববার ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||

  • ভাদ্র ২৪ ১৪৩১

  • || ০৩ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

দৈনিক গোপালগঞ্জ

সিঙ্গাপুরে ধর্ষণের দায়ে জাপানি নাগরিককে বেত্রাঘাতের রায়

দৈনিক গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ৪ জুলাই ২০২৪  

বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে ‘নিষ্ঠুর এবং নির্মমভাবে’ ধর্ষণের দায়ে জাপানি এক নাগরিককে কারাদণ্ডের পাশাপাশি বেত্রাঘাতের সাজা দিয়েছে সিঙ্গাপুরের একটি আদালত।

এক প্রতিবেদনে সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, সিঙ্গাপুরের আদালতে প্রথমবারের মতো প্রথম কোনও জাপানি নাগরিক হিসেবে দণ্ডপ্রাপ্ত হয়েছেন ৩৮ বছর বয়সী ইকো কিতা। পেশায় নরসুন্দর এই জাপানিকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী ধর্ষণের দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে ওই সাজা দিয়েছেন আদালত। সিঙ্গাপুরে নিযুক্ত জাপানি দূতাবাস এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।

এদিকে ধর্ষণের দায়ে দোষী সাব্যস্ত ইকো কিতাকে সাড়ে ১৭ বছরের কারাদণ্ডের পাশাপাশি ২০ বার বেত্রাঘাতের সাজাও দেওয়া হয়েছে। সিঙ্গাপুরে ব্যাপক বিতর্কিত ও বহুল প্রচলিত শারীরিক সাজার একটি এই বেত্রাঘাত। দেশটিতে ভাঙচুর, ডাকাতি এবং মাদকপাচারের মতো অপরাধের ঘটনায় এই সাজা বাধ্যতামূলক ভোগ করতে হয়।

আদালতের নথি অনুযায়ী, ২০১৯ সালে রাতের নগরী হিসেবে পরিচিত ক্লার্ক কোয়েতে ভুক্তভোগীর সঙ্গে কিতার সাক্ষাৎ হয়েছিল। ভুক্তভোগীর তখন বয়স ছিল সবে ২০ বছর, ঘটনার আগে তিনি কিতাকে চিনতেনও না।

ওই ছাত্রীকে কিতা যখন তার ফ্ল্যাটে নেয় এবং নির্যাতন চালায়, তখন ভুক্তভোগী মাতাল অবস্থায় ছিলেন।

মামলার বিবরণ অনুযায়ী, নির্যাতনের ঘটনা কিতা তার মোবাইল ফোনে ধারণ করেন এবং তা এক বন্ধুর কাছে পাঠান।

পরে ভুক্তভোগী ওই অ্যাপার্টমেন্ট থেকে বেরিয়ে আসেন এবং পুলিশের কাছে ধর্ষণের অভিযোগ করেন।

কিতাকে ওই দিনই গ্রেপ্তার করে হেফাজতে নেয় পুলিশ। তারা কিতার ফোনে নির্যাতনের ঘটনার দুটি ভিডিও পেয়েছিল।

এই ঘটনাকে ‘পাশবিক ও নৃশংস’ বলে বর্ণনা করেছেন বিচারক এদিত আব্দুল্লাহ। তিনি বলেছেন, ঘটনার সময় ভুক্তভোগী দুর্বল ও মাতাল ছিলেন এবং নিজেকে রক্ষার মত অবস্থায় ছিলেন না।

যৌনকর্মের জন্য ভুক্তভোগীরই ইঙ্গিত ছিল- আসামি পক্ষের এমন দাবিও খারিজ করে দিয়েছেন বিচারক।

বিবিসি জানিয়েছে, কিতার রায় গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করেছে জাপানের সংবাদমাধ্যম। সোশাল মিডিয়াতেও আলোচনা চলছে। আধুনিক সিঙ্গাপুরে বেত্রাঘাতের রায়ে অনেকে মর্মাহত হয়েছেন। আবার কেউ কেউ এই রায়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন।

একজন লিখেছেন, ‘জাপানে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ উঠলে ভুক্তভোগীর ওপরই দায় চাপাতে পুলিশ ও সমাজ উঠেপড়ে লাগে এবং শাস্তিও হয় নমনীয়।’

সিঙ্গাপুর বলে আসছে, সহিংস অপরাধ ঠেকাতে বেত্রাঘাত কাজে দেয়। যদিও এর পক্ষে কোনো প্রমাণ নেই বলে ভাষ্য কিছু অধিকারকর্মীর।

সিঙ্গাপুরে বেত্রাঘাতের জন্য কাঠের লাঠি ব্যবহার করা হয়। সেটি দিয়ে আঘাত করা হয় উরুতে, অনেকক্ষেত্রে সেখানে স্থায়ীভাবে দাগ থেকে যায়।

মানবাধিকার সংগঠন ট্রান্সফরমেটিভ জাস্টিস কালেক্টিভের তথ্য অনুযায়ী, লাঠির আকার হয় দেড় মিটারের মত, আর ব্যাসার্ধ হয় ১.২৭ সেন্টিমিটারের চেয়ে কম।

সেখানকার বেত্রাঘাতের ঘটনা আন্তর্জাতিক মনোযোগ পায় ১৯৯৪ সালে। সম্পদের ক্ষতিসাধনের অপরাধে তখন ১৯ বছর বয়সী মার্কিন নাগরিক মিশেল ফেইকে ছয় বেত্রাঘাত করা হয়েছিল।

ওই শাস্তি না দিতে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন অনুরোধ জানিয়েছিলেন। তাতে সিঙ্গাপুর কর্তৃপক্ষ শাস্তির ধরনে পুরোপুরি সরে না এসে বেত্রাঘাতের সংখ্যা কমিয়েছিল।

দৈনিক গোপালগঞ্জ
দৈনিক গোপালগঞ্জ