• শনিবার ২৯ জুন ২০২৪ ||

  • আষাঢ় ১৫ ১৪৩১

  • || ২১ জ্বিলহজ্জ ১৪৪৫

দৈনিক গোপালগঞ্জ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরে সম্পর্ক আরও উন্নত হবে: জিয়ানচাও

দৈনিক গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ২৬ জুন ২০২৪  

বাংলাদেশে সফররত চীনের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিসি) কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক বিভাগের মন্ত্রী লিউ জিয়ানচাও আগামী জুলাইয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন চীন সফরের তাৎপর্য তুলে ধরেছেন। পারস্পরিক স্বার্থে সহযোগিতার নতুন ক্ষেত্রসমূহে সম্পৃক্ততা সম্পর্ক উন্নয়নে সহায়ক হবে বলে মনে করেন তিনি। মঙ্গলবার ঢাকায় চীনা দূতাবাসের এক সংলাপে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সফররত চীনের মন্ত্রী এই আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
তিনি বলেন, আমি নিশ্চিত, এই সফরে আমাদের সম্পর্ক আরও উন্নত হবে। চীন-বাংলাদেশ সম্পর্কের ক্ষেত্রে তার (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) অসামান্য অবদানের জন্য আমরা সত্যিই কৃতজ্ঞ।’
মন্ত্রী জিয়ানচাও বলেন, আজ চীন ও বাংলাদেশ আরও শক্তিশালী অংশীদারিত্ব ও বন্ধুত্বের জন্য নতুন ভিত্তি তৈরি করছে, কারণ উভয় দেশ দ্রুতই উন্নতি করছে। একই সঙ্গে উভয় সরকারই জনগণের জন্য আধুনিকীকরণ যাত্রায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
তিনি বাংলাদেশ-চীন সম্পর্কের ঐতিহাসিক গভীরতা ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার ওপর জোর দিয়ে বলেন, প্রতিবেশী কূটনীতিতে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক সবসময়ই চীনের অন্যতম অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয়, যা দুই নেতার দিকনির্দেশনায় ক্রমাগত অগ্রগতি অর্জন করছে।
তিনি আরও বলেন, ‘জাতীয় মুক্তি ও স্বাধীনতার লড়াইয়ের সময় দুই দেশের জনগণের মধ্যে দৃঢ় বন্ধুত্ব ও বিশ্বাস গড়ে উঠেছে। এই বন্ধুত্বের শুরুটা করেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।’
রাজধানীর রেনেসাঁ হোটেলে ‘লুকিং টুয়ার্ডস দ্য ফিউচার অব চায়না-বাংলাদেশ রিলেশনস: এ কনভারসেশন উইথ দ্য সিপিসি ডেলিগেশন: শীর্ষক সংলাপের আয়োজন করে ঢাকায় চীনের দূতাবাস।
বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা এবং ব্যবসায়ী, শিক্ষাবিদ ও মিডিয়া কমিউনিটির প্রতিনিধিরা বাংলাদেশ-চীন সম্পর্কের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনায় অংশ নেন।
রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেন, এই অনুষ্ঠান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক উদযাপনের চেয়েও বেশি কিছু; গভীর সংযোগ গড়ে তোলা এবং পারস্পরিক বৃদ্ধির পথগুলো অন্বেষণ করার জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। তিনি বলেন, ‘চীন ও বাংলাদেশ সৌহার্দ্যের একটি ধারাবাহিকতা বজায় রাখে যা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে লালিত হচ্ছে।’
চীনের রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘আমাদের সম্পর্ক উন্নয়নের অবস্থা আমাদের যৌথ প্রচেষ্টা এবং আমাদের জনগণের সম্মিলিত আকাক্সক্ষার ফল। এই সংলাপ আমাদের অংশীদারিত্বকে এগিয়ে নিতে ধারণা ও দৃষ্টিভঙ্গি বিনিময়ের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যানেল হিসাবে কাজ করে।’
উদ্বোধনী বক্তব্যে লিউ জিয়ানচাও বাংলাদেশ সফর নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বলেন, ‘এখানে আসার আগে থেকেই আমি এই সফর নিয়ে সত্যিই রোমাঞ্চিত ছিলাম। শুধু তাই নয় যে আমি কখনো বাংলাদেশে আসিনি, বরং সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আমি এই মহান দেশটির অর্থনৈতিক বিস্ময়ের কথা শুনে আসছি। গত দুই-তিন দিন ধরে আমি ঘুরে বেড়িয়েছি, স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছি, চীনের চুক্তিবদ্ধ বা সমর্থিত পদ্মা সেতু ও বাংলাদেশী কোম্পানিগুলোর প্রকল্প পরিদর্শন করেছি।’
তিনি বলেন, ‘আমার দৃঢ় বিশ্বাস ছিল, চীন-বাংলাদেশ অংশীদারিত্ব ও বন্ধুত্ব অত্যন্ত দৃঢ় রয়েছে। আগামী বছর আমরা ৫০তম বার্ষিকী উদযাপন করতে যাচ্ছি, যা আমাদের দুই দেশের মধ্যে চমৎকার সম্পর্কের অর্ধ-শতাব্দী।’
তিনি আরও বলেন, চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের পর থেকে উভয় দেশ ধারাবাহিকভাবে একে অপরকে সম্মান, বিশ্বাস ও সমর্থন দিয়ে আসছে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের সম্পর্ক আরও জোরদার হয়েছে এবং প্রতিবেশীদের মধ্যে সমতা, পারস্পরিক সুবিধা ও শ্রদ্ধা এবং সৌহার্দ্যপূর্ণ সহাবস্থানের দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে। চীনের স্বপ্ন এবং সোনার বাংলা একে অপরের সঙ্গে একাত্ম এবং একে অপরের সাফল্যকে কাজে লাগাতে পারে।’
তিনি ২০১৬ সালের অক্টোবরে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের বাংলাদেশ সফরের কথা স্মরণ করেন। সেসময় এই সম্পর্ক কৌশলগত সহযোগিতামূলক অংশীদারিত্বে উন্নীত হয়েছিল। তিনি গত আগস্টে দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রেসিডেন্ট শি এবং প্রধানমন্ত্রী হাসিনার মধ্যে বৈঠকের কথাও তুলে ধরেন। 
লিউ জিয়ানচাও ভিশন-২০৪১ এবং বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়নে বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভকে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করতে চীনের প্রস্তুতির কথা ব্যক্ত করে অবকাঠামো, ডিজিটাল অর্থনীতি, ক্লিন এনার্জি, জলবায়ু প্রতিক্রিয়া এবং শিল্প উন্নয়নে ব্যাপক সহযোগিতার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখার গুরুত্ব তুলে ধরে চীনের কূটনৈতিক নীতির রূপরেখা তুলে ধরেন মন্ত্রী।
লিউ জিয়ানচাও ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘অন্য দেশের রাজনৈতিক দলের সঙ্গে লেনদেন করার ক্ষেত্রে আমরা তিনটি প্রধান নীতি সমুন্নত রাখি। প্রথমত, আমরা কখনই মতাদর্শগত সীমা নির্ধারণ করি না এবং সে কারণেই সারা বিশ্বে আমাদের বন্ধু রয়েছে। দ্বিতীয়ত, অন্য দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক গড়ে ওঠে, তারা ক্ষমতায় থাকুক বা না থাকুক। তৃতীয়ত, আমরা মতপার্থক্য দূর করা, একে অপরকে সম্মান করা এবং একে অপরের কাছ থেকে শেখার সময় সাধারণ ভিত্তি খোঁজার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
তিনি উল্লেখ করেন, চীন পারস্পরিক বোঝাপড়া, বিশ্বাস ও বন্ধুত্ব বৃদ্ধি করে বাংলাদেশের অনেক রাজনৈতিক দলের নেতাদের চীন সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছে।
তিনি বলেন, ‘চীন প্রতিটি উন্নয়নশীল দেশের রোল মডেল এবং দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনৈতিক শক্তি। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সিপিসির সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক সই করেছে এবং এটিই বিশ্বের একমাত্র রাজনৈতিক দল যার সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে আওয়ামী লীগ সমঝোতা স্মারক সই করেছে।’

দৈনিক গোপালগঞ্জ
দৈনিক গোপালগঞ্জ