• রোববার ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||

  • ভাদ্র ২৪ ১৪৩১

  • || ০৩ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

দৈনিক গোপালগঞ্জ

সরকারি সহায়তার ‘সমতা’ স্কিমে নিবন্ধন বেশি

দৈনিক গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ১৩ জুলাই ২০২৪  

সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি চালুর ১০ মাস ২২ দিনে এর চার স্কিমে গ্রাহক সাড়ে ৩ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। চাঁদা জমা পড়েছে ১০০ কোটি টাকার বেশি। তবে মোট গ্রাহকের ৭৩ শতাংশের বেশি ‘সমতা’ স্কিমে নিবন্ধিত। এই স্কিমে দারিদ্র্যসীমার নিচে থাকা স্বল্প আয়ের মানুষ অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কথা থাকলেও সঠিক যাচাই-বাছাই না থাকায় অযোগ্যরাও এতে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছেন। তবে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ শিগগির বিষয়টি খতিয়ে দেখা শুরু করবে বলে জানা গেছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বছরের ১৭ আগস্ট সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি উদ্বোধন করেন। সেদিনই বেসরকারি চাকরিজীবীদের জন্য ‘প্রগতি’, স্বকর্মে নিয়োজিতদের জন্য ‘সুরক্ষা’, প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য ‘প্রবাস’ ও নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীর জন্য ‘সমতা’ স্কিম চালু হয়। প্রথম মাসে চার স্কিমে গ্রাহক ছিলেন ১২ হাজার ৮৮৯ জন। এর পর আট মাসে নিবন্ধনকারী ১ লাখ ছোঁয়। গত মে-জুনেও বিপুলসংখ্যক মানুষ নিবন্ধন করেন। গত সোমবার পর্যন্ত ১০ মাস ২২ দিনে পেনশনের চার স্কিমে গ্রাহক হয়েছেন ৩ লাখ ৫২ হাজার জন। জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের হিসাব অনুযায়ী, এই গ্রাহকদের চাঁদা জমা পড়েছে ১০০ কোটি ৪ লাখ টাকা। তবে তাদের মধ্যে শুধু ‘সমতা’ স্কিমে নিবন্ধিত ২ লাখ ৫৮ হাজার ৬০৭ জন, যা মোট গ্রাহকের ৭৩ দশমিক ৪৭ শতাংশ। ‘সমতা’য় চাঁদা জমা পড়েছে ৩৩ কোটি ৪০ লাখ ৭০ হাজার টাকা। এ ছাড়া ‘প্রগতি’ স্কিমে নিবন্ধিত ২১ হাজার ৯৩২ জন চাঁদা দিয়েছেন ৩৫ কোটি ৯৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং ‘সুরক্ষা’ ও ‘প্রবাস’ স্কিমে নিবন্ধিত ৭১ হাজার ৪৬১ জন চাঁদা দিয়েছেন প্রায় ৩০ কোটি টাকা।
গত ১ জুলাই থেকে স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ বা সমজাতীয় সংস্থা ও তাদের অধীন অঙ্গপ্রতিষ্ঠানে চাকরিতে যোগদানকারীদের সর্বজনীন পেনশনের ‘প্রত্যয়’ স্কিমের আওতায় আনা হয়েছে। তবে তাদের নিবন্ধন কার্যকর হবে বেতন পাওয়ার পর।

‘সমতা’য় নিবন্ধিতদের মাসিক চাঁদা ১ হাজার টাকা। এর মধ্যে গ্রাহককে দিতে হয় ৫০০ টাকা। বাকি ৫০০ টাকা দিচ্ছে সরকার। একমাত্র এই স্কিমে চাঁদার অর্ধেক দিচ্ছে সরকার। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাব অনুযায়ী, দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী স্বল্প আয়ের মানুষ অর্থাৎ, যাদের বছরে আয় ৬০ হাজার টাকার নিচে, কেবল তাদেরই এই স্কিমে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কথা।

‘সমতা’ স্কিমে গ্রাহক দ্রুত বাড়ার কারণ সম্পর্কে সর্বজনীন পেনশন কর্তৃপক্ষের সদস্য গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘শুরুর দিকে প্রচারণার অভাবে সর্বজনীন পেনশনে নিবন্ধন কম ছিল। তবে পরে প্রচারণা বাড়ায় নিবন্ধনকারী বাড়ে। মানুষ এখন বুঝতে পারছে, ৫০০ টাকা দিলে সরকার আরও ৫০০ টাকা দেবে। এতে ভবিষ্যৎ সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।’

নিবন্ধনকারীর বার্ষিক আয় ৬০ হাজার টাকার নিচে, সেটি কীভাবে নিশ্চিত করা হচ্ছে– এ প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘‘সার্টিফিকেট দিতে হবে– এমন বাধ্যবাধকতা দেওয়া হয়নি ইচ্ছা করে। তাই গ্রাহক নিজের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থান থেকে স্কিম পছন্দ করছেন। ‘সমতা’ স্কিমে চাঁদা কম, সুবিধাও কম। তাই বেশি আয়ের কেউ এই স্কিমে নিবন্ধন করলে তারই লোকসান। কারণ তিনি তাতে পেনশন সুবিধা পাবেন কম।’’ তার পরও ‘সমতা’য় নিবন্ধিত কারও আয়ে অসংগতি ধরা পড়লে তার স্কিম পরিবর্তন করে দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

পেনশন কর্তৃপক্ষ বলছে, কেউ যদি সরকারের অন্যান্য সামাজিক নিরাপত্তার সুবিধা পান, তবে ‘সমতা’য় যুক্ত হতে পারবেন না। এটি নিশ্চিত করতে সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচির সঙ্গে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার উপাত্তে সমন্বয় রয়েছে (ডেটা ইন্টিগ্রেশন)। তবে এখনও সেবা প্রদানকারী সব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ডেটা ইন্টিগ্রেশন হয়নি। তাই যোগ্য না হয়েও অনেকে ‘সমতা’ স্কিমে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছেন। এরই মধ্যে এমন কয়েকজনকে চিহ্নিত করে তাদের অন্য স্কিমে দেওয়া হয়েছে। আগামীতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো ও সরকারের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সর্বজনীন পেনশন কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা সমন্বয় করা হবে। তখন নিবন্ধনের সময় জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর দিলেই সবকিছু যাচাই-বাছাই হয়ে যাবে। এ জন্য আরও কিছু সময় প্রয়োজন।  

সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছাতে মাঠ প্রশাসনকে যুক্ত করা হয়েছে। জাতীয়, বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ‘সর্বজনীন পেনশন কার্যক্রম বাস্তবায়ন ও সমন্বয় কমিটি’ গঠন করা হয়েছে। মাঠ প্রশাসনকে সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনাও দেওয়া হয়। এ ছাড়া বিভাগীয় পর্যায়ে সর্বজনীন পেনশন মেলা ও কর্মশালা হচ্ছে। গত এপ্রিলে রাজশাহীতে এমন মেলা ও কর্মশালা হয়; আগস্টে হবে বরিশাল ও খুলনায়।

এদিকে সর্বজনীন পেনশন কার্যক্রম জোরদার ও পেনশন কর্তৃপক্ষের প্রাতিষ্ঠানিক রূপরেখা নির্ধারণে একটি প্রকল্প হাতে নিচ্ছে সরকার। নাম ঠিক করা হয়েছে ‘সর্বজনীন পেনশন পদ্ধতি শক্তিশালীকরণ’ প্রকল্প। এর মেয়াদ হবে ২০২৪ সালের নভেম্বর থেকে ২০২৮ সালের জুন। ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৮০০ কোটি টাকা।

দৈনিক গোপালগঞ্জ
দৈনিক গোপালগঞ্জ