• রোববার ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||

  • ভাদ্র ২৪ ১৪৩১

  • || ০৩ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

দৈনিক গোপালগঞ্জ

কোটা কমানোর চিন্তা সরকারে

দৈনিক গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ১৩ জুলাই ২০২৪  

সরকারি চাকরিতে প্রবেশের কোটা সংস্কারের দাবিতে দেশব্যাপী আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা। কয়েক দিন ধরে তাঁরা বিক্ষোভ সমাবেশ ও ‘বাংলা ব্লকেড’ নামে অবরোধ কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন। এই অবস্থায় সরকারও বিষয়টি সমাধানের পথ খুঁজছিল। গত বৃহস্পতিবার কোটা নিয়ে হাইকোর্টের সংক্ষিপ্ত রায় প্রকাশের পর সেই পথের দিশা মিলেছে। এখন কোটা কমানোর চিন্তা করছে সরকার।

সরকারের গুরুত্বপূর্ণ একাধিক সূত্র বলছে, কোটাব্যবস্থা সংস্কার করে কোন কোটা কীভাবে কমানো যেতে পারে, তা নিয়ে সরকারের ভেতরে আলোচনা শুরু হয়েছে। সরকার চাইছে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি সমাধান দিতে। অনানুষ্ঠানিকভাবে হলেও এ বিষয়ে সরকারের নীতিনির্ধারকদের মধ্যে আলাপ হচ্ছে দফায় দফায়। প্রধানমন্ত্রী চীন থেকে দেশে ফেরার পরও সরকারের ওপর মহলে আলাপ হয়েছে বিষয়টি নিয়ে।

জানতে চাইলে জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন গতকাল শুক্রবার বলেন, ‘কোর্টের পর্যবেক্ষণগুলো আমাদের আমলে নিতে হবে। এখন এ-সংক্রান্ত বিচার চলমান আছে। তাই ভবিষ্যতে আমাদের কী করণীয়, তা আদালতের পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে বিবেচনা করা যাবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘বিচার বিভাগের অনেক পর্যবেক্ষণ আমরা নির্বাহী বিভাগ গ্রহণ করি, বাস্তবায়ন করি।’

সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিল করে ২০১৮ সালে জারি করা পরিপত্র অবৈধ ঘোষণার সংক্ষিপ্ত রায় গত বৃহস্পতিবার প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট। সংক্ষিপ্ত রায়ে বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, নাতি-নাতনিদের জন্য কোটা পুনর্বহাল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। একই সঙ্গে জেলা, নারী, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর জন্য কোটা বজায় রাখতে বলা হয়। সরকার প্রয়োজনে কোটার অনুপাত পরিবর্তন, হ্রাস বা বৃদ্ধি করতে পারবে। আর এই রায় সরকারের ওপর কোনো বাধা সৃষ্টি করবে না। কোনো পাবলিক পরীক্ষায় কোটা পূরণ না হলে সরকার সাধারণ মেধাতালিকা থেকে শূন্য পদ পূরণ করতে পারবে।

হাইকোর্টের এই রায়ে কোটা সংস্কারের পথ খুলে গেছে বলে আভাস দিয়েছেন সরকার ও আওয়ামী লীগের একাধিক নীতিনির্ধারক।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ  বলেন, প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরে এসেছেন। নিশ্চয়ই এটা নিয়ে একটি সমাধান হবে। কারণ, সরকার তো চায় সমাধান হোক। কোর্টের রায় বিবেচনা করে আইনমন্ত্রী যেভাবে গাইড করবেন, সেভাবেই হবে।

৮ জুলাই সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সরকারের চার মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, শিক্ষামন্ত্রী মুহিবুল হাসান চৌধুরী, তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত এবং শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী শামসুন নাহার উপস্থিত ছিলেন। আওয়ামী লীগের একটি সূত্র জানায়, বৈঠকে চলমান কোটাবিরোধী আন্দোলন নিয়ে বিস্তারিত আলাপ-আলোচনা হয়েছে।

স্বাধীনতার পর থেকেই বিভিন্ন সময় কোটা কম-বেশি হয়। ২০১৮ সালে কোটা ৫৬ শতাংশে এসে দাঁড়ায়। এর মধ্যে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা, ১০ শতাংশ নারী, ১০ শতাংশ জেলা, ৫ শতাংশ ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী এবং ১ শতাংশ প্রতিবন্ধী কোটা। পরবর্তী সময়ে কোটায় মুক্তিযোদ্ধার সন্তান এবং তারপর নাতি-নাতনি যুক্ত করা হয়।

কোটাপদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে ২০১৮ সালে আন্দোলনে নামে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। আন্দোলনের একপর্যায়ে সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে নবম থেকে ১৩তম গ্রেড পর্যন্ত কোটাপদ্ধতি তুলে দেয় সরকার। ওই পরিপত্রের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০২১ সালে রিট করেন চাকরিপ্রত্যাশী ও মুক্তিযোদ্ধার সন্তান অহিদুল ইসলামসহ সাতজন। ওই আবেদনের চূড়ান্ত শুনানি শেষে গত ৫ জুন হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে। এরপরই আবার আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা।

এরপর হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আবেদন করে। ১০ জুলাই হাইকোর্টের রায়ের ওপর চার সপ্তাহের স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে আদেশ দেন আপিল বিভাগ।

গতকালও বিক্ষোভ 
কোটা সংস্কারের আন্দোলনে পুলিশি হামলার প্রতিবাদে গতকালও দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন শিক্ষার্থীরা। গতকাল রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন আন্দোলনকারীরা। প্রায় এক ঘণ্টা শাহবাগ মোড়ে অবস্থান করেন তাঁরা। পরে মিছিল নিয়ে রাজু ভাস্কর্যে এসে কর্মসূচি শেষ হয়। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার।

নতুন কর্মসূচি অনুযায়ী, আজ শনিবার সারা দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজ ও ৬৪ জেলায় অনলাইন ও অফলাইন প্রতিনিধি সম্মেলন করা হবে এবং সন্ধ্যা ৬টায় পরবর্তী কর্মসূচি নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করা হবে।

জানতে চাইলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, ‘নির্বাহী বিভাগের পক্ষ থেকে যখনই আমাদের আশ্বাস দেওয়া হবে, তখনই আমাদের আন্দোলন শেষ হবে। তার আগে বলতে পারছি না, আমাদের আন্দোলন কবে শেষ হবে। হাইকোর্টও বলেছেন, এটা নির্বাহী বিভাগের কাজ। আমাদের দাবি আদালতের কাছে নয়, আমাদের এক দফা দাবি নির্বাহী বিভাগের কাছে।’

তবে এই আন্দোলনের কারণে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি হলে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে, এমন বার্তা মন্ত্রী, পুলিশসহ সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে দেওয়া হচ্ছে। চট্টগ্রাম, কুমিল্লাসহ কয়েকটি স্থানে সড়ক ও মহাসড়কে রাস্তায় অবরোধের বিরুদ্ধে কিছু ব্যবস্থাও নিয়েছে। তবে রাজধানী ঢাকাসহ জেলায় জেলায় পুলিশকে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে দেখা গেছে।

গতকাল এক অনুষ্ঠানে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান বলেন, আদালতের আদেশ মেনে চলার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে কেউ যদি আইন ভেঙে কোনো কার্যক্রমে অংশ নেন, সেটা পুলিশ বরদাশত করবে না।

দৈনিক গোপালগঞ্জ
দৈনিক গোপালগঞ্জ