• রোববার ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||

  • ভাদ্র ২৪ ১৪৩১

  • || ০৩ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

দৈনিক গোপালগঞ্জ

রাত পোহালেই ভোট

দৈনিক গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ২৯ ডিসেম্বর ২০১৮  

অপেক্ষার পালা শেষ, আজ শনিবার রাত পোহালেই আসবে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ ভোট। আগামীকাল রবিবার সারাদেশে একযোগে অনুষ্ঠিত হবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। বিরোধপূর্ণ রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যেও সব দলের অংশগ্রহণে হতে যাচ্ছে এবারের নির্বাচন। সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো শঙ্কা প্রকাশ করলেও ভোট দিতে মুখিয়ে আছেন দেশের সাধারণ মানুষ।

এবার ভোটের লড়াই হচ্ছে মূলত আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের সঙ্গে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের। আগামীকাল অনুষ্ঠেয় বহুল প্রতীক্ষিত ভোটের মাধ্যমে নির্ধারণ হবে কোন জোট ক্ষমতাসীন হবে। ভোটের দিন শেষ হওয়ার পর রাত যত গভীর হতে থাকবে, ততই পরিষ্কার হয়ে আসবে এ প্রশ্নের উত্তর। একে একে আসতে থাকবে ফল; মিলবে জবাব, আগামী ৫ বছর দেশ পরিচালনার ভার কোন জোটের সম্ভাব্য কার হাতে থাকবে?

সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ২৯৯ আসনে একযোগে ভোটগ্রহণ চলবে। গাইবান্ধা-৩ আসনে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী ড. টিআইএম ফজলে রাব্বী গত ১৯ ডিসেম্বর মৃত্যুবরণ করায় এই আসনটিতে নির্বাচন স্থগিত রাখা হয়েছে। গতকাল সকাল ৮টা থেকে নির্বাচনী প্রচার বন্ধ হয়েছে। রাস্তায় সেনাবাহিনী টহলে নেমেছে। আজ বিকালের মধ্যেই কেন্দ্রে কেন্দ্রে পৌঁছে যাবে ব্যালট পেপারসহ ভোটগ্রহণ সামগ্রী।

নির্বাচন কমিশন সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকবে সারাদেশে বিভিন্ন বাহিনীর প্রায় ৭ লাখ সদস্য। যানবাহন চলাচলের ওপর আরোপ করা হয়েছে বিধিনিষেধ। আগামীকাল সারাদেশে সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।

২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর এবারই প্রথম অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হতে যাচ্ছে। বিএনপিবিহীন ২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচন ছিল অনেকটা ‘একতরফা’ ও ‘নিয়মরক্ষার’ নির্বাচন। ১০ বছর পর আগামীকাল ভোটের লড়াইয়ে মুখোমুখি হচ্ছে নৌকা ও ধানের শীষ। টানা দুই মেয়াদে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ অনেকটাই ‘নির্ভার’; উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে দেশবাসী এবারও তাদের ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করবে বলে প্রত্যাশা দলটির শীর্ষনেতাদের।

অপরদিকে আওয়ামী লীগ সরকারের ‘অত্যাচার-নিপীড়ন’ থেকে মুক্তি পেতে আগামীকাল ভোটাররা ব্যালট বিপ্লবের মাধ্যমে বিএনপিকে ক্ষমতায় নিয়ে আসবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন দলটির শীর্ষনেতারা।

নির্বাচনী মাঠ পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, নির্বাচনে জয়ী হতে আওয়ামী লীগের প্রস্তুতি বেশ গোছাল। হামলা-মামলায় জর্জরিত বিএনপি সেই তুলনায় অনেকটাই ছন্নছাড়া। ভোটারদের নির্বাচনী মাঠে আনতেই তাদের যত প্রচার।

রাজনৈতিক দল, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও সমর্থকদের কোনো ধরনের দ্বন্দ্বে না জড়ানোর আহ্বান জানিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নূরুল হুদা বলেছেন, ভোট হবে ‘উৎসবমুখর’। সবাইকে নির্ভয়ে কেন্দ্রে যাওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আওয়ামী লীগের পক্ষে এমন নির্বাচনী প্রচার আগে দেখেননি তিনি। বেশিরভাগ আসনে বিপুল ভোটে জিতবে তাদের প্রার্থীরা, এমনটিই মনে করেন তিনি। অন্যদিকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট বলছে, জনগণের জয় হবেই। দমন-পীড়ন চালিয়ে তাদের অগ্রযাত্রা ঠেকিয়ে রাখা যাবে না

বিএনপির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তাদের দলের ১০ হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ইসিও সরকারের পক্ষে কাজ করছে। অবশ্য, ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া বলেছেন, পুলিশের আচরণ পক্ষপাতমূলক নয়। পুলিশ যা কিছু করছে নিরপেক্ষতা ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে করছে।

বৈশিষ্ট্যের দিক থেকেও এবারের এ নির্বাচন অনেকটাই ব্যতিক্রম। ১০ বছর পর ভোটযুদ্ধে ফিরেছে দেশ। দলীয় সরকারের অধীনে এবারই প্রথম সব দল নির্বাচন অংশগ্রহণ করছে। এর আগে ২০১৪ সালে ৫ জানুয়ারির নির্বাচন দলীয় সরকারের অধীনে হলেও তাতে অধিকাংশ দল অংশ নেয়নি। এবারই প্রথম ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) এ ভোট হচ্ছে। ৬ আসনে ইভিএমে ভোট দেবে ভোটাররা। সাজার কারণে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া নির্বাচন করতে পারছেন না। তার ছেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও দ-ের কারণে নির্বাচনের বাইরে।

এবারের নির্বাচনে মোট ভোটার ১০ কোটি ৪১ লাখ ৯০ হাজার ৫৭৩। পুরুষ ও নারী ভোটারের সংখ্যা প্রায় সমান। প্রায় ১ কোটি ২৩ লাখ তরুণ ভোটার এবার ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে। ৪০ হাজার ১৮৩টি ভোটকেন্দ্রে ভোটগ্রহণ হবে। কার্যত এটি দলীয় সরকারের অধীনে দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচন। এবারের নির্বাচনে নিবন্ধিত ৩৯টি দল অংশ নিচ্ছে, দশম সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল ১২টি দল।

এবারের নির্বাচন নিয়ে পরস্পরের প্রতিপক্ষ দুই রাজনৈতিক জোট পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করে আসছে। গতকালও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি দল ইসিতে গিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে জানান, বিএনপি-জামায়াত এ নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ করতে তা-ব চালাচ্ছে। এতে এ পর্যন্ত তাদের দলের ৭ নেতাকর্মী নিহত হয়েছেন। এ বিষয়ে তারা কমিশনকে পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ করেছেন। অপরদিকে ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে সিইসির উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়ের পর আর ইসিতে কোনো অভিযোগ নিয়ে আসেননি। ঐক্যফ্রন্ট সিইসির পদত্যাগ দাবি করেছে।

ভোটকেন্দ্রের ভেতরে মোবাইল ফোন ব্যবহারেও নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, কেন্দ্রের ভেতরে কেবল প্রিসাইডিং কর্মকর্তা এবং কেন্দ্রের নিরাপত্তায় নিয়োজিত পুলিশের ইনচার্জ মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে পারবেন। ভোটাররা মোবাইল ফোন সঙ্গে নিয়ে কেন্দ্রে যেতে পারলেও সেটি বন্ধ রাখতে হবে। ভোটের দিন সড়কপথে যান চলাচল বন্ধ থাকলেও বিদেশগামীসহ প্রয়োজনীয় কাজে যাতায়াতে বিধিনিষেধ শিথিল থাকবে বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

ফল ঘোষণা প্রক্রিয়ার বিষয়ে ইসির অতিরিক্ত সচিব মোখলেসুর রহমান বলেন, প্রতিটি ভোটকেন্দ্রেই ফল ঘোষণা হবে। প্রিসাইডিং অফিসার ভোটগ্রহণ শেষে সংশ্লিষ্টদের উপস্থিতিতে কেন্দ্রেই ভোট গণনা করবেন। এ সময় সহকারী রিটার্নিং অফিসার ও প্রার্থীর এজেন্টরা উপস্থিত থাকতে পারবেন। ভোট গণনা শেষে প্রিসাইডিং অফিসার লিখিত ফল সংশ্লিষ্টদের সরবরাহ করবেন। পরে এ ফল রিটার্নিং অফিসারের কাছে পাঠাবেন। রিটার্নিং অফিসার সেটি ইসিতে পাঠাবেন। ইসির ফোয়ারা প্রাঙ্গণে স্থাপিত মঞ্চ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ফল ঘোষণা করা হবে।

এ চত্বরে ইসি ১০টি মনিটরের মাধ্যমে ফল প্রদর্শন করবে। ইসির অতিরিক্ত সচিব জানান, ইভিএম পদ্ধতির ভোটকেন্দ্রে ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে ভোটারদের জন্য স্মার্টকার্ড বাধ্যতামূলক নয়। তবে সেটি নিয়ে গেলে ভোটদান সহজ হবে। তিনি আরও জানান, সারা দেশে ভোটকেন্দ্রের জন্য এসএমএসের মাধ্যমে ভোটার এলাকা, ভোটকেন্দ্র ও কেন্দ্রের নম্বর পাওয়া যাবে। আজ শনিবার থেকে ইসির এই বিশেষ সেবা চালু হবে। নির্বাচনের নিরাপত্তায় ইসির তরফে প্রায় ৭ লাখ নিরাপত্তা সদস্য, ৭ লাখ বেসামরিক কর্মকর্তা, এক লাখ পর্যবেক্ষক, সাংবাদিক ও অন্যরা সম্পৃক্ত থাকবেন।

গতকাল নির্বাচনের সর্বশেষ প্রস্তুতি এবং এ সংক্রান্ত সার্বিক তথ্য জানান ইসি সচিব। তার দেওয়া তথ্যমতে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রিটার্নিং অফিসার আছেন ৬৬ জন, সহকারী রিটার্নিং অফিসার ৫৮২। সারাদেশে মোট ভোটকেন্দ্র ৪০ হাজার ১৮৩টি; ভোটকক্ষ ২ লাখ ৭ হাজার ৩১২টি। মোট ২৯৯টি নির্বাচনী আসনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ১৮৬১ জন। তাদের মধ্যে রাজনৈতিক দলের প্রার্থী ১৭৩৩ জন, স্বতন্ত্র ১২৮ জন। দেশি ৮১টি প্রতিষ্ঠানের ২৫ হাজার ৯০০ পর্যবেক্ষক থাকবেন। এ ছাড়া ফেমবোসা, এএইএ, ওআইসি ও কমনওয়েল্থ থেকে আমন্ত্রিত বিদেশি পর্যবেক্ষক থাকবেন ৩৮ জন। কূটনীতিকদের মধ্যে বিদেশি মিশনের ৬৪ কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন দূতাবাস ও বিদেশি সংস্থায় কর্মরত ৬১ বাংলাদেশি দৃষ্টি রাখবেন এবারের নির্বাচনে।

দৈনিক গোপালগঞ্জ
দৈনিক গোপালগঞ্জ