• মঙ্গলবার ০২ জুলাই ২০২৪ ||

  • আষাঢ় ১৭ ১৪৩১

  • || ২৪ জ্বিলহজ্জ ১৪৪৫

দৈনিক গোপালগঞ্জ

রাজনীতি গরমের কৌশল বিএনপিসহ বিরোধীদের

দৈনিক গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ২৯ জুন ২০২৪  

বিএনপিসহ অন্য সরকারবিরোধী দলগুলো বিভিন্ন ইস্যুতে আবারও আন্দোলনে নেমেছে। রাজনীতির মাঠ গরম করার লক্ষ্যে পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন ইস্যুভিত্তিক কর্মসূচি নিয়ে সরব থাকবে তারা। এভাবে জোরদার করা হবে সরকার পতনের আন্দোলন। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আজ শনিবার ঢাকায় সমাবেশ করবে বিএনপি। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক ভারত সফর ও কয়েকটি ‘অসম চুক্তি ও সমঝোতা’র প্রতিবাদে তিন দিনের কর্মসূচি দিয়েছে চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। একই ইস্যুতে ৫ জুলাই বিক্ষোভ মিছিল করবে গণতন্ত্র মঞ্চ। এই ইস্যুতে মাঠে সক্রিয় হয়েছে গণঅধিকার পরিষদ। শিগগির নতুন কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামার পরিকল্পনা করছে জামায়াতে ইসলামীও। এ ছাড়া অন্য ইসলামী দলগুলোও আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। বিশেষ করে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ ও গ্যাস-জ্বালানির সংকট নিরসন, কোরআন-সুন্নাহবিরোধী শিক্ষানীতি বাতিল ও সংস্কারের দাবিতে কর্মসূচি দিয়ে মাঠে নামার ঘোষণা দিয়েছে বিভিন্ন ইসলামী দল ও সংগঠন।

এদিকে, পাঠ্যবইয়ে বিতর্কিত বিষয় সংশোধন করার দাবিতে প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ, ২ জুলাই নারায়ণগঞ্জে শিক্ষা সেমিনার এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ময়মনসিংহ ও গাজীপুরে আলোচনা সভা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে হেফাজতে ইসলাম।

গত ৭ জানুয়ারির দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ‘একতরফা’ ও ‘ডামি’ আখ্যা দিয়ে তা প্রত্যাখ্যান ও বর্জনের ডাক দিয়েছিল বিএনপিসহ ৬৩টি রাজনৈতিক দল। যুগপৎভাবে ৪৮ ঘণ্টার হরতালও পালন করে দলগুলো। নির্বাচনের প্রায় এক মাসের মাথায় ২৬ ও ২৭ জানুয়ারি কালো পতাকা মিছিল করে বিএনপিসহ মিত্র দলগুলো। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের পর সেটিই ছিল প্রথম কোনো কর্মসূচি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বাতিল ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনে থাকলেও পরে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির বিষয়কেও যুক্ত করে বিএনপি। অবশ্য দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন বাতিল করে অবিলম্বে নতুন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার দাবি জানিয়ে আসছে বিরোধী দলগুলো। নির্বাচন ইস্যুতে এরপর আর কোনো বড় কর্মসূচিতে দেখা যায়নি বিএনপি ও এর মিত্রদের। মাঝখানে গত মে ও জুন মাসে অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বর্জন করে বিএনপিসহ বেশিরভাগ বিরোধী দল।
এদিকে, আগামীর আন্দোলনে গতি আনতে চায় বিএনপির হাইকমান্ড। সেই লক্ষ্যে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ, চট্টগ্রাম ও বরিশাল মহানগর বিএনপি এবং যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়েছে। ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটিও নতুনভাবে ঘোষণা করা হয়েছে। গত ১৫ জুন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির ৩৯ জন নেতার পদ রদবদল করা হয়েছে। এ ছাড়া ফরেন অ্যাফেয়ার্স অ্যাডভাইজারি কমিটি এবং স্পেশাল অ্যাসিসট্যান্ট টু দ্য চেয়ারপারসনস ফরেন অ্যাফেয়ার্স অ্যাডভাইজারি কমিটি নামে দুটি নতুন কমিটিও গঠন করা হয়েছে। অর্থাৎ দল গুছিয়ে নতুনভাবে আবারও সরকারবিরোধী আন্দোলন জোরদার করতে চায় বিএনপি।

আজ ঢাকায় বিএনপির সমাবেশ: গুরুতর অসুস্থ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে তিন দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। গত ২১ জুন গভীর রাতে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে খালেদা জিয়াকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে তার হৃদযন্ত্রে স্থায়ী পেসমেকার বসানো হয়।
খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বিএনপি ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী আজ শনিবার ঢাকার নয়াপল্টনে সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে। এ ছাড়া ১ জুলাই মহানগরগুলোয় এবং ৩ জুলাই দেশের সব জেলায় সমাবেশ করবে বিএনপি। সমাবেশে বড় জমায়েত ঘটিয়ে খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবিতে সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে চায় বিএনপি।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, গণতন্ত্রের প্রতীক খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে শনিবার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দুপুর ২টা থেকে সমাবেশের কার্যক্রম শুরু হবে। ইতোমধ্যে আমরা সমাবেশের জন্য চিঠি পুলিশ কমিশনারের দপ্তরে পাঠিয়েছি। বিএনপির একটি প্রতিনিধিদলও পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছে। সমাবেশ সফল করতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে সমন্বয়ক করে পর্যায়ক্রমে নানা প্রস্তুতিমূলক সভা হয়েছে। ইতোমধ্যে সমাবেশ সফল করতে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। আশা করছি, একটি ঐতিহাসিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।

নতুন কর্মসূচির পরিকল্পনা জামায়াতের: দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, নাগরিক দুর্ভোগ, বিদ্যুতের লোডশেডিংসহ বিভিন্ন জনস্বার্থ ইস্যুতে নতুন কর্মসূচির পরিকল্পনা করছে জামায়াতে ইসলামী। গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পর তা বাতিলের দাবিতে এবং উল্লিখিত ইস্যুতে কিছু কর্মসূচি পালন করলেও পরে সংগঠন গোছাতেই মনোযোগ দেয় জামায়াত। এখন দেশের ডলার সংকটসহ নানা ইস্যু সামনে এনে নতুনভাবে কর্মসূচি দিয়ে মাঠে নামার চিন্তা করছে দলটি। রোববার বা সোমবার দলের শীর্ষ নেতাদের বৈঠকে আলোচনা সাপেক্ষে কর্মসূচি চূড়ান্ত হবে বলে জানা গেছে। জামায়াতের কয়েকজন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কালবেলাকে বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার নানাভাবে সংকটে ও চাপে রয়েছে। এই সরকারের বিরুদ্ধে দেশের প্রায় ৯০ ভাগ মানুষ ঐক্যবদ্ধ। সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে জোরালো আন্দোলন করলেই সরকার ক্ষমতা ছেড়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে বাধ্য হবে। সুতরাং সেই লক্ষ্যে কাজ করছে জামায়াতে ইসলামী।

ফের মাঠে সক্রিয় ইসলামী আন্দোলন: সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে সম্পাদিত কয়েকটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকের প্রতিবাদে তিন দিনের কর্মসূচি দিয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। এর মধ্যে গতকাল শুক্রবার বাদ জুমা ঢাকায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে দলটি। দলটির আমির সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম বলেন, দেশবিরোধী সব চুক্তি বাতিল এবং চিহ্নিত দুর্নীতিবাজদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে আমরা কর্মসূচি দিয়েছি। পরবর্তী কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ৩ জুলাই জাতীয় সংলাপ এবং ৫ জুলাই সব জেলা/মহানগরে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল। পরে আরও নতুন কর্মসূচি আসবে বলে দলীয় সূত্র জানিয়েছে।

দৈনিক গোপালগঞ্জ
দৈনিক গোপালগঞ্জ