• রোববার ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||

  • ভাদ্র ২৪ ১৪৩১

  • || ০৩ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

দৈনিক গোপালগঞ্জ

হজরত হোসাইনের (রা.) শাহাদত বরণ: আমাদের করণীয় কী?

দৈনিক গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ১৬ জুলাই ২০২৪  

রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইনতেকালের প্রায় ৫০ বছর পর ৬১ হিজরির ১০ মহররমে কারবালায় হজরত হোসাইন (রা.)-এর শাহাদাতের ঘটনা ঘটে। নিঃসন্দেহে তার শাহাদত তার উচ্চ মর্যাদার বিষয়। একইসাথে মুসলমানদের জন্য খুবই বেদনাদায়ক একটি বিষয়।

বিষয়টি বেদনার ও দুঃখজনক হলেও এই দিন উপলক্ষ্যে শোক বা মাতম করা উচিত না। শোক বা মাতম করার প্রয়োজন যদি হতো তাহলে রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মৃত্যুতে সবচেয়ে বেশি শোক পালন করা হতো।

দুঃখ ও আনন্দ উভয়টির বিধান ইসলামি শরিয়তে দেয়া আছে। মুসলমানদের ওপর ওয়াজিব হল সেই হুকুম অনুযায়ীই আমল করা। উদাহরণস্বরূপ বিপদের সময় একজন বান্দার কী করণীয়, কী বর্জনীয় তার বর্ণনা আছে কোরআন মাজিদ ও হাদিসে। এ ব্যাপারে

وَ لَا تَقُوْلُوْا لِمَنْ یُّقْتَلُ فِیْ سَبِیْلِ اللهِ اَمْوَاتٌ،  بَلْ اَحْیَآءٌ وَّ لٰكِنْ لَّا تَشْعُرُوْنَ، وَ لَنَبْلُوَنَّكُمْ بِشَیْءٍ مِّنَ الْخَوْفِ وَ الْجُوْعِ وَ نَقْصٍ مِّنَ الْاَمْوَالِ وَ الْاَنْفُسِ وَ الثَّمَرٰتِ، وَ بَشِّرِ الصّٰبِرِیْنَ، الَّذِیْنَ اِذَاۤ اَصَابَتْهُمْ مُّصِیْبَةٌ،  قَالُوْۤا اِنَّا لِلهِ وَ اِنَّاۤ اِلَیْهِ رٰجِعُوْنَ، اُولٰٓىِٕكَ عَلَیْهِمْ صَلَوٰتٌ مِّنْ رَّبِّهِمْ وَ رَحْمَةٌ، وَ اُولٰٓىِٕكَ هُمُ الْمُهْتَدُوْن.

 

আর যারা আল্লাহর পথে নিহত হয়েছে তাদেরকে মৃত বলো না। প্রকৃতপক্ষে তারা জীবিত, কিন্তু তোমরা (তাদের জীবিত থাকার বিষয়টা) উপলব্ধি করতে পার না। আর আমি অবশ্যই তোমাদেরকে পরীক্ষা করব (কখনও) কিছুটা ভয়-ভীতি দ্বারা, (কখনও) জান-মাল ও ফল-ফসলের ক্ষয়ক্ষতির দ্বারা। সুসংবাদ শোনাও তাদেরকে, যারা (এরূপ অবস্থায়) ধৈর্যের পরিচয় দেয়। যারা কোনো বিপদ দেখা দিলে বলে ওঠে, আমরা সকলে আল্লাহরই এবং আমাদেরকে তার কাছেই ফিরে যেতে হবে। এরাই তারা, যাদের প্রতি তাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে বিশেষ করুণা ও দয়া আছে এবং এরাই আছে হিদায়াতের ওপর। (সুরা বাকারা ১৫৪-১৫৭)

 

বোঝা গেল, শাহাদতের মতো বিরাট মুসিবতেও শরিয়তের হুকুম হল, বিপদগ্রস্ত লোকেরা ধৈর্য ধরবে। ‘ইন্না লিল্লাহি... রাজিউন’ পড়বে এবং আল্লাহ তাআলার কাছে সওয়াবের আশা করবে।

 

কারো মৃত্যুতে শরিয়তের হুকুম হল ধৈর্য ধরা। ধৈর্য ধরার বেশ কিছু দোয়াও শিখানো হয়েছে হাদিসে। তার মধ্যে একটি হলো,


إِنّا لِلهِ وَإِنّا إِلَيْهِ رَاجِعُونَ، اللهُمّ أْجُرْنِي فِي مُصِيبَتِي، وَأَخْلِفْ لِي خَيْرًا مِنْهَا.

 

উচ্চারণ: ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। আল্লাহুম্মা উজুরনি ফি মুসিবাতি ওয়া আখলিফলি খইরন মিনহা।

 

নিশ্চয় আমরা সবাই আল্লাহ তাআলার জন্য। তার কাছেই আমাদেরকে ফিরে যেতে হবে। হে আল্লাহ, আমাকে এই বিপদের বদলে সওয়াব দান করুন। যা হারিয়েছি আমার জন্য তার চেয়ে উত্তম কিছুর ব্যবস্থা করুন। (মুসলিম ৯১৮)

 

অধৈর্য হয়ে আল্লাহর প্রতি অভিযোগ তুলে কোনো কথা বলা, বিলাপ করা, হাত পা আছড়ানো, বুক চাপড়ানো, চেহারা খামচানো, শোকের পোশাক পরা এর সবই হারাম। শরিয়তে খুব কঠোরভাবে তা থেকে বারণ করা হয়েছে। নবীজি (স.) বলেছেন,

"যে ব্যক্তি মুখে আঘাত করে, জামার বুক ছিঁড়ে, জাহেলি যুগের মতো বিলাপ করে সে আমাদের দলভুক্ত নয়। (বুখারি ১২৯৪, মুসলিম ১৬৫)"

অন্য একটি হাদিসে তিনি বলেন, ‘আমি ওই ব্যক্তি থেকে মুক্ত, যে শোকে মাথা মুণ্ডায়, বুক চাপড়ায়, কাপড় ছিঁড়ে।’ (মুসলিম ১৬৭, বুখারি ১২৯৬)

শোক পালনের ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, কেবল চোখ বেয়ে অশ্রু ঝরা কিংবা পেরেশান হওয়ায় কোনো সমস্যা নেই। এটা মানুষের স্বভাবজাত বিষয়। এটা ওই রহমতের প্রকাশ, যা আল্লাহ বান্দার হৃদয়ে দান করেছেন। কিন্তু পেরেশারির কারণে যদি মানুষ তার হাত কিংবা মুখ ব্যবহার শুরু করে তাহলে এটা হয় শয়তানের আনুগত্য থেকে। এর দ্বারা আল্লাহ তাআলা অসন্তুষ্ট হন। তাই এমন কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে।

দৈনিক গোপালগঞ্জ
দৈনিক গোপালগঞ্জ