• রোববার ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||

  • ভাদ্র ২৪ ১৪৩১

  • || ০৩ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

দৈনিক গোপালগঞ্জ

আশুরার দিনে যে দোয়া পড়বেন

দৈনিক গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ১৭ জুলাই ২০২৪  

আল্লাহ তাআলা যে চার মাসে যুদ্ধবিগ্রহ সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করেছেন। যে মাসগুলোকে বিশেষভাবে সম্মানিত করেছেন, মহররম তার অন্যতম। এটি হিজরি বর্ষপঞ্জির প্রথম মাস। মহররম মাসের ১০ তারিখকে আশুরা বলা হয়। আশুরার দিনে অনেক নবীর দোয়া কবুল করেছেন আল্লাহ তাআলা। তাই এ দিন দোয়া কবুলের দিন।

ইসলামি শরিয়তের মানদণ্ডে আশুরার অনেক তাৎপর্য ও ফজিলত রয়েছে। এ ছাড়া আশুরায় বেশ কিছু করণীয় কাজও আছে। জাহেলিয়া যুগে প্রাচীন আরবদের মধ্যে গুরুত্বের সঙ্গে পালিত হতো এই দিনটি। 

আশুরার দিন মক্কার মানুষ রোজা রাখত এবং কাবাঘরের গিলাফ পরিবর্তন করত। নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই দিনে রোজা রাখেন এবং অন্যদের রোজা রাখার উৎসাহ ও নির্দেশ দেন। এ ছাড়া রমজানের রোজার আগে আশুরার রোজা ফরজ ছিল। রমজানের রোজা ফরজ হলে আশুরার রোজা মোস্তাহাব পর্যায়ের ঐচ্ছিক ইবাদত হিসেবে গণ্য করা হয়।

তওবা কবুল হওয়া এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে মুক্তি, নিরাপত্তা এবং সাহায্য লাভ করার ইতিহাসজুড়ে আছে মহররম মাসের সঙ্গে। হজরত আলি (রা.) বলেন, এক ব্যক্তি হজরত রসুলুল্লাহ (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রসুল, রমজানের পর আপনি কোন মাসে রোজা রাখতে নির্দেশ দেন?


হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তুমি যদি রমজানের পর রোজা রাখতে চাও, তাহলে মহররমে রোজা রেখো। কেননা, মহররম আল্লাহর মাস। এ মাসে এমন একটি দিন রয়েছে, যেদিন আল্লাহতায়ালা (অতীতে) অনেকের তওবা কবুল করেছেন এবং ভবিষ্যতেও অনেকের তওবা কবুল করবেন।’ (জামে তিরমিজি: ৭৪১)


এক হাদিসে নবীজি বলেছেন, ‘মহররম হচ্ছে আল্লাহর মাস। এ মাসে এমন এক দিন (আশুরা) আছে, যেদিন আল্লাহ তাআলা (অতীতে) অনেকের তওবা কবুল করেছেন। ভবিষ্যতেও অনেকের তওবা কবুল করবেন। (জামে তিরমিজি: ৭৪১)


আমাদের উচিত হবে আশুরার দিনে আন্তরিক তওবা করা। তওবার দোয়াগুলো যথাযথভাবে পাঠ করা। তওবার বিভিন্ন দোয়ার উল্লেখ রয়েছে হাদিসে। এমনকি কিতাবে আশুরার দিনের একটি দোয়াও পাওয়া যায়।


اللَّهُمَّ يَا قَابِلَ تَوْبَةِ آدَمَ عَلَيْهِ السَّلَامُ يَوْمَ عَاشُورَاءَ وَيَا مُسْكِنَ سَفِينَةِ نُوحٍ عَلَيْهِ السَّلَامُ عَلَى الْجُودِيِّ يَوْمَ عَاشُورَاءَ. وَيَا غِيَاثَ إِبْرَاهِيمَ عَلَيْهِ السَّلَامُ يَوْمَ عَاشُورَاءَ وَيَا فَارِجَ كُرْبَةِ ذِي النُّونِ يَوْمَ عَاشُورَاءَ. وَيَا غَافِرَ ذُنُوبِ دَاوُدَ عَلَيْهِ السَّلَامُ يَوْمَ عَاشُورَاءَ. وَيَا جَامِعَ دَعْوَةِ مُوسَى وَهَارُونَ عَلَيْهِمَا السَّلَامُ يَوْمَ عَاشُورَاءَ. وَيَا خَالِقَ جِبْرِيلَ وَمِيكَائِيلَ وَإِسْرَافِيلَ وَعَزْرَائِيلَ يَوْمَ عَاشُورَاءَ. وَيَا خَالِقَ الْعَرْشِ وَالْكُرْسِيِّ وَاللَّوْحِ وَالْقَلَمِ وَالسَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ يَوْمَ عَاشُورَاءَ اقْضِ حَوَائِجَنَا وَحَوَائِجَ جَمِيعِ الْمُسْلِمِينَ وَيَا قَاضِيَ الْحَاجَاتِ وَيَا دَافِعَ السَّيِّئَاتِ. وَيَا حَيُّ يَا قَيُّومُ. يَا ذَا الْجَلَالِ وَالْإِكْرَامِ. وَيَا مَالِكَ يَوْمِ الدِّينِ إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ اهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيمَ صِرَاطَ الَّذِينَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّالِّينَ تَوَفَّنَا مُسْلِمِينَ وَأَلْحِقْنَا بِالصَّالِحِينَ. وَصَلَّى اللَّهُ عَلَى سَيِّدِنَا مُحَمَّدٍ وَآلِهِ وَصَحْبِهِ وَسَلَّمَ. سُبْحَانَ رَبِّكَ رَبِّ الْعِزَّةِ عَمَّا يَصِفُونَ وَسَلَامٌ عَلَى الْمُرْسَلِينَ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইয়া ক্ববিলা তওবাতি আদামা আইহিস সালাম ইয়াওমা আশুরাআ, ওয়া ইয়া মুসকিনা সাফিনাতি নুহ আলাল জুদিয়্যি ইয়াওমা আশুরাআ। ওয়া ইয়া গিয়াসা ইবরাহিমা ইয়াওমা আশুরাআ। ওয়া ইয়া কুরবাতি জিন নুনি ইয়াওমা আশুরাআ। ওয়া ইয়া গাফিরা জুনুবি দাউদা আলাইহিস সালামু ইয়াওমা আশুরাআ। ওয়া ইয়া দাওয়াতি মুসা ওয়া হারুন ইয়াওমা আশুরাআ। ওয়া ইয়া খালিকা জিবরিলা ওয়া মিকাইলা ওয়া ইসরাফিলা ও আজরাইলা ইয়াওমা আশুরাআ। ওয়া ইয়া খালিকাল আরশি ওয়াল কুরসিয়্যি ওয়াল লাওহা ওয়াল কলমা, ওয়াস সামাওয়াতি ওয়াল আরদা ইয়াওমা আশুরা। আকজি হাওয়াইজানা ওয়া হাওয়ায়িজা জামিয়াল মুসলিমিন। ওয়া ইয়া কাজিয়াল হাজাত, ওয়া ইয়া দাফিয়াস সাইয়্যাত। ওয়া ইয়া হায়্যু ইয়া ক্বাইয়্যুম। ইয়া জালজালালি ওয়াল ইকরাম। ওয়া ইয়া মালিকা ইয়াও মিদ দিন, ইয়্যাকা নাআবুদু ওয়া ইয়্যাকা নাসতায়িন। ইহদিনাস সিরাতাল মুসতাকিম। সিরাতাল লাজিনা আনআমতা আলাইহিম। গাইরিল মাগদু-বি আলাইহিম ওয়ালাদ দললিন। তাওয়াফফানা মুসলিমিন ওয়াআল হিকনা বিস সলিহিন, ওয়া সল্লাল্লাহু আলা সাইয়্যিদিনা মুহাম্মদ, ওয়া আলিহি ওয়া সহবিহি ওয়া সাল্লাম। সুবহানা রব্বিকা রব্বিল ইজ্জাতি আম্মা ইয়াসিফুন ওয়া সালামুন আলাল মুরসালিন, ওয়াল হামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামিন।

অর্থ: হে আল্লাহ, আপনি আশুরার দিনে আদমের (আ.)-এর তওবা কবুলকারী, আশুরার দিনে জুদিতে নূহের (আ.)-এর জাহাজ নামিয়ে এনেছেন আশুরার দিনে। হে ইব্রাহিমের মুক্তি দানকারী আশুরার দিনে। ওহে আশুরার দিনে যুন-নুনের কষ্ট থেকে মুক্তিদানকারী। হে দাউদের গুনাহ মাফকারী আশুরার দিনে। হে আশুরার দিনে মূসা ও হারুনের দোয়া কবুলকারী, হে আশুরার দিনে জিব্রাইল, মিকাইল, ইসরাফিল ও আজরাইলের সৃষ্টিকর্তা। হে আরশ, লোহ, কলম, আসমান ও জমিনের স্রষ্টা, আশুরার দিনে। আমাদের ও সমস্ত মুসলমানের প্রয়োজন পূরণ করুন, হে প্রয়োজনের বিচারক, হে মন্দ কাজ থেকে রক্ষাকারী। হে চিরজীবী, হে চিরজীবী। হে মহিমার অধিকারী ও সম্মানের অধিকারী। হে বিচার দিবসের মালিক, আপনিই তিনি যার আমরা উপাসনা করি। আপনিই আমাদেরকে সরল পথ দেখান, যাদেরকে আপনি কল্যাণ দান করেছেন, তাদের নয় যাদের উপর আপনার ক্রোধ। আমাদের মুসলিম হিসাবে মৃত্যু দিন। আমাদের সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভূক্ত করুন। আমাদের নবী মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তার পরিবার ও তার উপর রহমত বরকত বর্ষণ করুন। আমরা আপনার পবিত্রতা বর্ণনা করতেছি আপনার মাহিমা শিকার করছি হে মহিমান্বিত প্রতিপালক। শান্তি বর্ষিত হোক রসুলদের উপর, সব প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি বিশ্বজগতের পালনকর্তা।


এছাড়াও তওবার আরো যে দোয়াগুলো আছে সেগুলো পড়া।  أَسْتَغْفِرُ اللَّهَ الْعَظِيمَ الَّذِي لاَ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ الْحَىَّ الْقَيُّومَ وَأَتُوبُ إِلَيْهِ উচ্চারণ: আসতাগফিরুল্লাহাল আজিমাল্লাজি লা-ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়্যুল কাইয়্যুমু ওয়া আতুবু ইলাইহি।

অর্থ: মহান আল্লাহর কাছে আমি ক্ষমা চাই, যিনি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, যিনি চিরঞ্জীব, চিরস্থায়ী এবং আমি তার কাছে তাওবা করি। হাদিসে এসেছে, যে ব্যক্তি এই দোয়া পড়ে, তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়, যদিও সে রণক্ষেত্র থেকে পলায়ন করে থাকে। (তিরমিজি: ৩৫৭৭)

ﺭَﺏِّ ﺍﻏْﻔِﺮْ ﻟِﻲْ ﻭَﺗُﺐْ ﻋَﻠَﻲَّ ﺇِﻧَّﻚَ ﺃﻧْﺖَ ﺍﻟﺘَّﻮَّﺍﺏُ ﺍﻟﺮَّﺣِﻴْﻢُ উচ্চারণ: রাব্বিগফিরলি ওয়া তুব ‘আলাইয়া, ইন্নাকা আনতাত তাওয়াবুর রহিম

অর্থ: (হে আমার) রব! আমাকে মাফ করুন; আমার তাওবা কবুল করুন। নিশ্চয়ই আপনি তাওবা কবুলকারী পরম দয়াময়।’ ইবনু উমার (রা.) বলেন, আমরা গুণে দেখতাম যে, নবী কারিম রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের একই মজলিসে দোয়াটি ১০০ বার পর্যন্ত পাঠ করছেন। (তিরমিজি: ৩৪৩৪, আবু দাউদ: ১৫১৬)

سُبْحَانَ اللّٰهِ وَبِحَمْدِهِ أَسْتَغْفِرُ اللّٰهَ وَأَتُوبُ إِلَيْهِ উচ্চারণ: সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি, আসতাগফিরুল্লাহা ওয়া আতূবু ইলাইহি।

অর্থ: আমি আল্লাহর প্রশংসাসহ পবিত্রতা ঘোষণা করছি। আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং তাঁর নিকট তাওবা করছি। আয়েশা (রা.) বলেন, রসুল রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মৃত্যুর আগে এই ইস্তেগফারটি অধিক মাত্রায় পড়তেন। (মুসলিম, রিয়াদুস সালেহিন: ১৮৮৬)

أَسْتَغْفِرُ اللّٰهَ وَأَتوبُ إِلَيْهِ উচ্চারণ: আসতাগফিরুল্লাহা ওয়া আতূবু ইলাইহি।’ অর্থ: ‘আমি আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাচ্ছি এবং তার নিকট তাওবা করছি।

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, আমি রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের চেয়ে আর কাউকে এটি অধিক পরিমাণে পড়তে দেখিনি। (সহিহ ইবনু হিব্বান: ৯২৮)

দৈনিক গোপালগঞ্জ
দৈনিক গোপালগঞ্জ